হাদিসে ইরশাদ আছে, তিন প্রকার মানুষের ওপর আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর অভিশাপ। তন্মধ্যে একপ্রকার হলো- যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও নিজের গোনাহ ক্ষমা করাতে পারলোনা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৪৫১) বছর ঘুরে ক্ষমার এমন এক অতুলনীয় সুযোগ নিয়ে হাজির হয় রমজান মাস। সালাত, কোরআন তেলাওয়াত, দান-সদকাসহ সকল ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ মেলে। কিন্তু এই মহিমান্বিত পবিত্র মাসের প্রচলিত কিছু মন্দ প্রথা এবং নিন্দিত কাজ ক্ষুণ্ণ করছে রমজানের মাহাত্ম্য। এর মধ্যে অন্যতম হলো- মেয়েদের শ্বশুরালয়ে ইফতারি প্রেরণ। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্যে যেটি এক মহাআতঙ্কের নাম ও ধনবানদের জন্যে এক বিলাসী প্রথা, যার কোন নির্দেশনা কোরআন-হাদিস থেকে আসেনি। তবে কেন এই কু-প্রথা সামাজিক ব্যধির মত গ্রাস করছে মুসলিম সমাজকে। যার উত্তর হয়তো অনেক শিক্ষিত জনের কাছেও নেই। মূলত উপযুক্ত ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষার অভাবেই এই কুসংস্কারমূলক প্রথাটি এত বিরাটভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হয়।
ইফতারিও যৌতুক; এই প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম




মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া ইফতারি পাঠানোর রীতির দরুন, দেশের অনেক জায়গায় প্রতি বছর অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। শ্বশুরবাড়ি থেকে ইফতার না পাঠালে স্বামীর বাড়িতে
অনেক মেয়েদের শিকার হতে হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের। বেশিরভাগ সময়েই দরিদ্র বাবা-মা মেয়ের সুখের জন্যে নিজের কষ্ট লুকিয়ে রেখে হাসিমুখে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি ইফতার পাঠান।
অন্যদিকে রমজান এলেই ঘরের বউদের ওপর শুরু হয় অপ্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে ইফতারি না আসার খূটা দেয়া। বাড়ির দুইয়ের অধিক ছেলে থাকলে অন্য বউদের শ্বশুরবাড়ি থেকে পাঠানো ইফতারের সঙ্গে
তুলনা করতেও কার্পন্য করেননা আমাদের দেশের অনেক শাশুড়ীরা।
প্রশ্ন আসতে পারে এই ঘটনা গুলো কাদের দ্বারা সংঘটিত হয়?
অবাক হলেও সত্য পঞ্চাশ-ষাট শতাংশেরও অধিক পড়ালেখা জানা শিক্ষিত মানুষরাও এই প্রথাকে নিজেদের পরিবারের রীতি করে রেখেছেন। অথচ একজন মুসলিমের কখনই উচিত নয়
এমন কাজকে সমর্থন করা। অথচ হাদিসে স্পষ্ট এসেছে, ‘অন্তরের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমোদন ছাড়া এক মুসলমানের সম্পত্তি অন্য মুসলমানের জন্যে হালাল নয়।’
এই জুলুম অথবা শিরক পর্যায়ে পড়া কু-প্রথাটির অনুমোদন ইসলামে নেই। হাদিসে শরীফে রোজাদারদেরকে ইফতার করানোর গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক ফজিলত বর্ননা করা হয়েছে। কিন্তু মেয়ের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি ইফতার পাঠানোর ব্যাপারে কোন হাদিস বর্ণিত হয়নি। উপরন্তু এর কারণে যদি কাউকে কোনো প্রকার নির্যাতন বা তাচ্ছিল্য করা হয়- তবে সেটা তো আরও কঠিন গোনাহের শামিল। কেননা, জালেমকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন না।
ন্যায়-নৈতিকতা এবং শিক্ষা বিপ্লবের এই সময়টায় প্রত্যেক ঘরে ঘরেই এই কু-প্রথার বিপক্ষে আওয়াজ তোলা খুব জরুরি। আত্নশুদ্ধি এবং সংযমের মাস রমজানে এই ইফতারি প্রথা বিসর্জনের মাধ্যমেও নিজের আত্নশুদ্ধির পথটা বেগবান করাটা অনেক জরুরি।